বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সদর ও পৌরশহরে আইন কানুন তোয়াক্কা না করে এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, অনিয়ম, সঠিক কাগজপত্র তৈরি না করে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে ব্যবসা। সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে এ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াবেটিস সেন্টারে নেই কোনো ডাক্তার, নার্স এবং অপরিচ্ছন্নভাবে অপারেশন থিয়েটার পরিচালনা ব্যবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, সেবিকা এবং টেকনোলজিস্ট না থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় প্রসূতিসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো, অপারেশন কক্ষ এবং চিকিৎসা সেবা দিতে আসা চিকিৎসকদের সেবার মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ক্লিনিক রয়েছে ১৩টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৯টি। মাত্র পাঁচ-ছয়টি ছাড়া বাকি কোনো প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন নেই। এদিকে গত ১লা অক্টোবর পৌর শহরের বীরগঞ্জ মডার্ন ক্লিনিক নামে অনুমোদনহীন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের জাহিরুল ইসলামের স্ত্রী হাওয়া বিবি নামে প্রসূতি সিজারের পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত ২৭শে অক্টোবর সকালে পৌর শহরের ফিশারির মোড় এলাকায় অবস্থিত অনুমোদনহীন বেসরকারি দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যায় ক্লিনিকের নবজাতক ও প্রসূতিরা ।
এসব ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযানে নামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অভিযানে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় এবং সরকারি অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ক্লিনিকের পরিবেশ, অপারেশন থিয়েটারের পরিবেশ এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি দরকার সেগুলো যথাযথ না পাওয়ার কারণে পরবর্তীতে পৌর শহরের রিদিতা ক্লিনিক এবং পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অন্যদিকে মা ও শিশু হাসপাতাল নামে দু’টি ক্লিনিক এবং রোগ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ সাপোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং হক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু কর্তৃকপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না রেখে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অদৃশ্য শক্তির বলে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েসেশন বীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো, জাকারিয়া ডালিম জানান, বেশির ভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে।দ্রুত সময়ে অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সবাই যেন সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা করেন আমরা সে ব্যাপারে সবাইকে তাগিদ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি অনিয়ম বন্ধে সরকারি যে কোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোহাম্মদ মহসীন জানান, উপজেলায় ক্লিনিক রয়েছে ১৩টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৯টি। মাত্র ছয়টি ছাড়া বাকি কোনো প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন নেই। আমরা এ সব অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে এলাহী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মহোদয় বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন। এ ব্যাপারে রোববার উপজেলা পরিষদের আলোচনা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে এবং বিধি বিধানগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা হবে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।