বিকাশ ঘোষ,বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় আর উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপী দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যতিক্রমী মেলা বসেছে। যা সবার কাছে বাসিয়া হাটি নামে পরিচিত।
এতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীরা আসেন সেজেগুজে। কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, চুলের বেণিতে শোভা পায় ফুলের মালা। এতে পিছিয়ে থাকেন না তরুণরাও। এ মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হয়।পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।
বুধবার(২৫ অক্টোবর -২০২৩) দুপুরের পরেই অনুষ্ঠিত মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজারো লোকজন। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
মেলায় এতটাই জমসমাগম হয়- যেখানে তিলধারণের জায়গা নেই। মানুষের চাপে ও ভিড়ে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক প্রায় অচল। মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও ছিল।
এ ছাড়া মেলায় আগতদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। কোনো প্রকার প্রচার ছাড়াই হাজার হাজার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত হয়। এই দিনে সেখানে চলতে থাকে বাজনার তালে তালে একক ও দলগতভাবে তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ। একপাশে গানের আসর আর অন্য পাশে চলে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বাছাই।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা থেকে আসা তরুণ সোয়ারেন মুর্মু বলেন, ‘একটা সময় এ মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে।’
একই কথা জানিয়ে জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা রানী হাসদা বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনযাত্রায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ আদিবাসী ছেলে মেয়েরা এখন বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। তাই পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে।’
জানতে চাইলে মেলা আয়োজক কমিটি বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সদস্য শ্যামলাল মুরমু বলেন, ‘পূর্ব পুরুষেরা এ মেলা শুরু করে। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলা যাবে না। আনুমানিকভাবে কয়েকশ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলার ব্যাপারে এলাকার সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
১১নং মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাহারুল ইসলাম চৌধুরী হেলাল জানান, ‘ আমার পূর্বপুরুষের আমল থেকে হয়ে আসছে এই মেলা। তবে আমি নির্বাচিত হওয়ার পর মেলাকে আরো আনন্দমুখর করার লক্ষে নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’