বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি.
গুরা মাছ কেটে চলে জয়ন্তী বেওয়ার সংসার
বৃদ্ধা বয়সী জয়ন্তী বেওয়ার অভাব অনটন আর শারীরিক অসুস্থতার কাছে হার না মেনে মাছ কাটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইহ্মেত্র ব্রাহ্মণ পাড়ার গ্রামের মৃত প্রিয়নাথ রায়ের স্ত্রী জয়ন্তী বেওয়া। তিনি মাসিক ৫ শত ৫০ টাকা ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী ২০ বছর আগে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে তিনি। অসহায় হতদরিদ্র জয়ন্তী বেওয়ার অভাব অনটনের কারণে কিছুদিন মানুষের বাসাবাড়িতে, ছাত্র ছাত্রীদের মেসে রান্নার কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের ভার আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে বর্তমানে তেমন ভারি কাজ করতে অসুবিধা হয়। তাই মাছ কাটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বীরগঞ্জ পৌরশহরের দৈনিক বাজারে মাছ কাটাতে আসা রাজিউল ইসলাম (৩৮) জানান, বাজার থেকে এক কেজি গুরা মাছ কিনেছেন। মাছ কেনার পর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাটাকাটি করা অনেক ঝামেলা, এজন্য বাজারেই কাটার ব্যবস্থা দেখে সে অনেক খুশি। ওই দিন সাদিকুরের সঙ্গে ৩০ টাকার চুক্তিতে সবগুলো মাছ কেটে দিবেন জয়ন্তী।
সকাল ৮ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত মাছ কাটেন তিনি। এভাবেই কেউ ২০ টাকা কেউ ৩০ টাকা সবমিলিয়ে কোনদিন ১২০ টাকা কোনদিন ১৩০ টাকা আয় হয় তার। এছাড়া তিনি সরকারি বিধবা ভাতা পান, তা দিয়েই কোনরকমে চলে তার সংসার।
জয়ন্তী বেওয়ার সঙ্গে কথা বলে জানান, তার দুই সন্তান, এক ছেলে ও এক মেয়ে, দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে ভ্যান চালক, থাকে গ্রামের বাড়ি দামাইক্ষেত্রে। তাও আবার থাকে পরের জায়গায়। ভ্যান চালিয়ে নিজেরই সংসার ঠিক মতো চালাতে পারেন না, মাকে আর কি সাহায্য করবেন। সরকারি বিধবা ভাতা আর মাছ কেটে যা আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে দিন চলছে। বর্তমানে জয়ন্তী বেওয়ার কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত ব্যথা। তেমন ভারি কাজ করতে পারেন না। সপ্তাহে ৩০০ টাকার ঔষধ লাগে।
তিনি আরো জানান, ‘লোকলজ্জা করে লাভ কি বাবা? পেটে খিদে ভিক্ষা না করে মানুষের কাছে হাত পাতার চাইতে কাজ করে খাওয়া অনেক সন্মানের। তাই ভিক্ষা না করে মাছ কাটার কাজ বেছে নিয়েছি। বিষয়টি ছোট ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।’ জয়ন্তী বেওয়া আরও জানান, আমার দুঃখের কথা শুনে সাবেক বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিনাত রেহানা মেডাম অল্প কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। তা দিয়ে ভালো চিকিৎসক কে দেখিয়ে ঔষধ কিনতেই শেষ হয়েছে।