দয়ারাম রায় ll
ঘর ভাঙ্গছে সর্বনাশা পরকীয়া। এ ব্যাধি আজ সমাজে বড় ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ব্যাধির ফলে অনেকের সোনার সংসার আগুন ধরেছে। রাস্তা পরিষ্কারে একে অপরকে পৃথিবীতে থেকে সরিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। পরকীয়ায় এত বড় ভয়াবহতা নেমে এসেছে। মায়েরা সবজাতক সন্তানদেরও এতিম করে ঘর ছেড়েছে। সমাজে আজ এ কী নির্মমতা? সমাজের আজ গতি পথ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন আমার কাঁচা হাতে বলা সম্ভব না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পরকীয়া ব্যাধিতে পরে অনেকে ভাল নেই। অনেকে আবার ভূল শোধরানোর চেষ্টা করছে। আবার কারো উপায় নেই ভূল শোধরানোর তারা ধর্ম ত্যাগ করে সর্বনাশা পরকীয়ায় জড়িয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে। তাই সাধু সাবধান। রাগ অভিমানে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই অগাধ ধৈর্য্য ধারন করে সামলিয়ে চলতে হবে। বর্তমান সমাজে পরকীয়ার পাশাপাশি ডির্ভোস বেড়েছে,তাতে নারীরা এগিয়ে বলে জানা যায়। করোনা মহামারীতে এসব কিছু কম না হয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের আচরনে ভিন্নতা রুপ পেয়েছে। মানবতা হীনতার পরিচয় দিয়েছে আদরের সন্তানরা,পিতা-মাতা অতি গুরুজনদের রাস্তায়,জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে যাহা বিবেক হীনতার পষ্ট রুপ। সমাজ সভ্যতা এ সব বিবেক হীনদের কেউ ভাল চোখে দেখে নি। তারা তিরস্কৃত হয়েছে সমাজে। পরকীয়ার এখন বিস্তারিত আলোচনায় ফেরা যাক।
‘পরকীয়া’ শব্দটির আবিধানিক অর্থ হচ্ছে পর-স্ত্রী সমন্ধীয় প্রেম। একই ভাবে বাংলা সাহিত্যে ‘পরকীয়াবাদ’ নামে একটি মতাদর্শের উদ্ভব ঘটেছিল বৈষ্ণব যুগে। বৈষ্ণব শাস্ত্রে যে প্রেম বিষয়ক মতবাদ সেটাই ‘পরকীয়াবাদ’ হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছে সেটি ছিল কাম গন্ধহীন শুন্য। তারপর পরকীয়া প্রেম বহুদুর পথ অতিক্রম করেছে। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে বিয়ে বিষয়টা নতুন নয়। আমরা ঘোটুল প্রথা থেকে শুরু করে আজ অবধি বহু বর্নিল বিয়ের রুপে দেখতে পাই। যে কোন অঞ্চলের বিয়ের ফুল কথাকে সংস্কৃত ভাষায় একটা ভিন্ন রুপে দেয়া হয়েছে। বিয়ের অনুসন্ধানে ছেলে-মেয়ের হাতে হাত রেখে সুতো দিয়ে বেঁধে পুরোহিত মন্ত্র পড়ান আর বর-কনে পড়েন যদি দং হৃদয়ং মম,তদস্তুং হৃদয়ং তব। অর্থাৎ অগ্নি দেবতাকে সাক্ষী রেখে তারা পরেন আজ থেকে তোমার হৃদয় যা আমার হৃদয় তাই। দুজনের সম্মিনিত জীবনের শুরু হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এভাবেই বিয়ের শুরু। যে কারনে একমন,একচিন্তার চর্চা থেকে স্ত্রীর নাম এসেছে অর্ধাঙ্গিনী,জীবন সঙ্গী আরো কত কী। কিন্তু আসলে কী এভাবে সবখানে চলে? দুই পরিবারের দুটি মানুষ,যার একজন অন্যজনকে জানেই না অথবা ধরা যাক প্রেম করে বিয়ে হচ্ছে,তাতেই বা আর একজনকে কতটুকু জানে ? এই জানা না জানার ওপর নির্ভর করেই চলে দিন,বাড়ে অবিশ্বাস। পাশাপাাশি থাকার মধ্যদিয়ে দেখা দেয় বিশাল এক শূণ্যতা। এই শুণ্যতা রচনা করে আবার নতুন এক স্বপ্নের। এক ঘর থেকে অন্য ঘরের মানুষের প্রতি এই মোহ,এই টান আবার রচনা করে নতুন জগতের। আমাদের সমাজ ও সামাজিকতা বিয়ের পরের এই প্রেমকে স্বীকার না করলেও পথ টা কী? একজন মানুষ সারা জীবন অপছন্দকে পছন্দ করে বেঁচে থাকবে? এই প্রশ্নই যখন প্রকট আকার ধারন করে সমস্যা সংকট তখন বাড়ে। অস্থির হয়ে যায় সংসার। কখনো সংসার ভাঙ্গে। ভাঙ্গা গড়ার এই নিয়ত খেলার মধ্যদিয়ে জীবন তবুও থামে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে বিভিন্ন পরিবারে অশান্তি অসুখ লেগেই আছে। এক গবেষণায় জানা গেছে,এসব অশান্তির অধিকাংশ কারন স্বামী-স্ত্রীর প্রতি অবিশ্বাস,প্রত্যাশা পূরন না হওয়া এবং ভালোবাসা হীন কর্তৃত্ব প্রবনতা। সার্বিক ভাবে পারিবারিক সম্পর্কের দিকে তাকালে যে ছবিটি প্রথমেই চোখে পড়ে তা হচ্ছে একটি পরিবারের সার্বিক অবস্থান। দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকুরীজীবী। এখনকার দিনে অধিকাংশ পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করে। দেখা যায় স্বামী একটু রাত করে বাড়িতে ফেরে,আবার কখনো স্ত্রী হয়তো রাত করে ফেরে অথবা দেখা গেল দুজনেই বিপরীত লিঙ্গেও দুজন অফিস কলিকের সাথে শেয়ার করে ফিরল। এ ঘটনা দুজনেরই চোখে পড়ল,সাথে সাথে বদলে গেল পরিবারের স্বাভাবিক আচার আচরন। এরপর যা হওয়ার তাই হয়। যারে দেখতে নারী, তার চলন বাঁকা। স্বামী-স্ত্রী কেউ কাউকে দু চোখে দেখতে পারে না। এ অবস্থায় স্বামীরা সহনশীল ভূমিকা রাখার পরিবর্তে অনেকেই ভালোবাসা হীন কর্তৃত্ব প্রবনতা নিয়ে হাজির হয় সংসারে। দেখা দেয় স্বামী স্ত্রীর প্রতি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উভয়ে মরিয়া হয়ে উঠে। কেউ যেন কাউকে চেনে না এমন আচরনেই সব সময় ফুটে উঠে দুজনের আচরনে। অথচ এরা নিজেরা পছন্দ করেই হয়তো বিয়ে করেছিল একদিন। অথবা পরিবার পছন্দ করেই বিয়ে দিয়েছিল দুজনকে। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই বেঁজে ওঠে ভাঙ্গনের সুর। হয়তো ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। হয়তো দুজনেরই প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু এখন আর হিসাব মিলছে না। ক্রমশই দুজনের ভেতরে একটা দেয়াল গড়ে উঠেছে নির্দি¦ধায়। এই দেয়ালকে ভাঙ্গবে কে? কোন পথ নেই একে রুখবার। এটা শুধু সন্তান হবার আগেই হয় তা নয়, সন্তান হবার পরেও এ অবস্থা প্রকট আকার ধারন করে। পরিবারের এই অশান্তির ছাপ পড়ে পরিবারের সন্তানটির উপর। প্রতিদিন বাবা মায়ের ঝগড়াঝাটি যখন উত্তপ্ত পরিস্থিতির রুপ নেয় তখন এটি আর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে যেমন থাকে না,তেমনি থাকে না সভ্যতা ভদ্রতার ভিতরে। তারপরেও মানুষ শান্তি চায়,স্বস্তি চায়। কিন্তু যে সুখের স্বস্তির কথা চিন্তা করে “এত টুকু বাসা করেছিনু আশা ” এমন ধারনাকে নির্ভর করেই মানুষ সংসার বাঁধে,সেই সংসারে অবিশ্বাস ঢুকলে পরিণতি কী হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বিয়ে জনিত অতৃপ্তি দম্পতি কে উদ্বুদ্ধ করে বিকল্প পথ খুঁজতে। দাম্পত্য সম্পর্কে যখন ভাটা পড়ে তখন স্বামী কিংবা স্ত্রী বিকল্প পথে সে ঘাটতি পূরন করতে চায়। তাদের কেউ কেউ ঝুঁকে পড়ে মদ কিংবা অন্য কোনো নেশার দিকে,কেউ যুক্ত হয় ক্লাব বা কোন গোষ্ঠীর সাথে। সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠে যেটা তা হচ্ছে ঘরভাঙ্গা পরকীয়া।
পরকীয়া আমাদের সমাজে ক্রমশই বাড়ছে। পরিবারে যখন অশান্তি বিরাজ করে, দুজন দুজনের দোষ খুঁজতেই মরিয়া হয়ে উঠে তখন আর কি করা? অফিসের কলিক,স্বামীর বন্ধু কিংবা বন্ধুর স্ত্রী ক্রমশই ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়ে। এভাবে এক সাথে একই ছাদের নিচে বাস করা কত বিপদজনক ভাবা যায়? এক সাথে বসবাস করে স্বামীকে ঠকিয়ে আরেক সত্তাকে ধারন করা কী রীতিমতো অভিনয় না? এই পরকীয়ার কারনে হত্যা,খুনের সংখ্যাও কম নয়। প্রতিনিয়তই আমাদের চারপাশ ঘিরে থাকে অনেক ঘটনা।