বিকাশ ঘোষ:
বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলসমুহের মধ্যে আম অন্যতম। স্বাদে, গন্ধে ও তৃপ্তি প্রদানে আম অতুলনীয় তাই আমকে ‘ফলের রাজা’ বলা হয়। আম পছন্দ করে না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের সব এলাকাতে আম গাছ দেখা গেলেও চাপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে আম চাষ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে আমের ফলন বেশ কম, হেক্টর প্রতি মাত্র ৪ টন। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রায় ১০ টন। আমের ফলন কম হওয়ার যে সকল কারণ দায়ী, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তাদের মধ্যে অন্যতম। পোকা-মাকড়ের আক্রমণে শুধু মাত্র ফলন কমে যায় তাই নয়, অনেক সময় আমের ফলন শূন্যের কোঠায়ও পৌঁছতে পারে। সুতরাং আমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সঠিক সময়ে পোকা দমন অপরিহার্য।
🔴আমের প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক পোকার পরিচিতি, তাদের ক্ষতির ধরন এবং দমন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষি তথ্য ও পরামর্শ পেজে আলোচনা করা হলঃ
🔴আমের শোষক পোকাঃ
এ পোকা অন্য সব পোকার চাইতে আমের বেশী ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশের সর্বত্র এবং আমের সবজাতে এ পোকা আক্রমণ করে থাকে। সারা বছর আমগাছে এই পোকাগুলি দেখা যায়।
🔴ক্ষতির ধরণঃ
আম গাছে কচি পাতা বা মুকুল বের হওয়ার সাথে সাথে এগুলি সক্রিয় হয়ে উঠে। এ পোকা নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় আমগাছের সকল কচি অংশ থেকে রস চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। নিম্ফ গুলি আমের মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ পরিমান রস শোষন করে খায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয় যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে যার উপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ২০-১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া হপার আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
🔴প্রতিকারঃ
🔺আম বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশেষ করে গাছের ডাল পালা যদি খুব ঘন থাকে তবে প্রয়োজনীয় পরিমান ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে 🔺অমের মুকুল যখন ৮/১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন একবার এবং আম মটর দানার মত হলে আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন রাইজ) মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
🔺 আমের হপার পোকার কারণে সুটিমোল্ড রোগের আক্রমণ অনেক সময় ঘটে তাই সুটিমোল্ড দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ঔষধ (যেমন ঔষধ) ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
🔯২। ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ
আমের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ১৯৯৫ সাল থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ এর বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্য করা যায়। এর পর প্রায় প্রতি বছর এ পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। বর্তমানে আম চাষীদের নিকট এ পোকা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
🔴ক্ষতির ধরণঃ
আম মার্বেল আকারের হলেই এ পোকার আক্রমন শুরু হয় এবং আম পাকার পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার উপর ডিম পাড়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়া খুব ছোট বিন্দুর মত আম ছিদ্র করে আমের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং আমের শাঁস খেতে থাকে। পরে আটি পর্যন্ত আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানটি কাল হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর আক্রমণের ফলে পচন ধরে যায়। বেশী আক্রান্ত আম ফেটে যায় এবং গাছ থেকে পড়ে যায়।
🔴প্রতিকারঃ
🔺আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং গাছের মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। ফলে পোকার আক্রমণ কম হবে।
🔺আম বাগান নিয়মিত চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
🔺 পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়া মাত্র ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে অথবা কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। এক্ষেত্রে হারভেস্ট-এ ভাল ফল পাওয়া যায়
🔴 মাছি পোকাঃ
মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ক ও পাকা আম আক্রান্ত হয়। ফজলী, ল্যংড়া, খিরসাপাত সহ বিভিন্ন জাতের পরিপক্ক ও পাকা আম গাছে থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে।
🔴ক্ষতির ধরণঃ
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ক ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা বুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতরে সাদা রং এর
🔴প্রতিকারঃ
🔺 আম গাছে পাকার আগেই পরিপক্ক অবস্থায় পেড়ে আনা।
🔺 আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে।
🔺প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে ০.৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষ টোপ বাগানে রেখে মাছিপোকা দমন করা যেতে পারে।