সেলিম সম্রাট, রংপুর ব্যুরোঃ
বিপিএল খেলা নিয়ে জুয়ায় হেরে স্ত্রীর হাত-পা-মুখ বেঁধে ব্লেড দিয়ে পুরো শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে দিয়েছে স্বামী।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে স্বামীর নির্যাতনে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হন গৃহবধূ নুরন নাহার (২২)। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা গ্রামের খায়রুল ইসলামের স্ত্রী।
হাসপাতাল ও নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবার জানান, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সরলখাঁ গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে নুরন নাহারের সাথে দুই বছর আগে বিয়ে হয় বাগডোরা গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খায়রুল ইসলামের। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থল রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ ব্যাংক মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন পোশাক শ্রমিক খায়রুল ইসলাম।
প্রথম দিকে সম্পর্ক ভাল থাকলেও কিছুদিন পর কারণে-অকারণে শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের সময় নেয়া যৌতুকের এক লাখ টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করে পুনরায় ২০ হাজার টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন। নুরন নাহার সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।
চাহিদামত টাকা না পেয়ে মদ্যপ অবস্থায় খায়রুল কিছুদিন আগে স্ত্রীর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাগ্যগুণে বেঁচে যায় নুরন নাহার।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়ায় সব হারিয়ে রাতে বাসা ফেরেন মদ্যপ খায়রুল। এ সময় বাসার দরজা খুলে দিতে বিলম্ব হওয়া অজুহাতে স্ত্রী নুরন নাহারকে ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চিঁড়ে লবন লাগিয়ে দেয়।
ভোরে স্বামী খায়রুল ঘুমিয়ে পড়লে কোনভাবে হাত পায়ের রশি খুলে বাসা থেকে বেড়িয়ে বাসে উঠে রবিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে লালমনিরহাট পৌঁছে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন নুরন নাহার। সেখানে তৃতীয় তলার ৫৯ নম্বর বেডে ছটফট করছেন তিনি।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে নুরন নাহার বলেন, জুয়া খেলায় টাকা হারিয়ে ইয়াবা সেবন করে এর আগে একদিন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কান ফাটিয়ে দেয় এবং বালিশচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে স্বামী খায়রুল। শুক্রবার রাতেও কোন কারণ ছাড়াই হাত-পা-মুখ বেঁধে পুরো শরীর ব্লেড দিয়ে চিঁড়ে লবন লাগিয়ে দেয়। এ কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন নুরন নাহার।
নুরন নাহারের বাবা কৃষক নুর ইসলাম বলেন, বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ এক লাখ টাকা ছাড়াও একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য মাঝে মধ্যে সাধ্যমত জামাইকে টাকা দিতাম। কিন্তু এরপরও সে আমার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। মেয়ে সুস্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনা বেগম বলেন, নুরন নাহারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম জানান, ঘটনাস্থল ঢাকার কেরানীগঞ্জে অভিযোগ দেয়ার নিয়ম হলেও এ বিষয়ে কেউ তাকে জানাননি। তবুও নির্যাতিত গৃহবধূর খোঁজখবর নেয়া হবে।