রংপুরের ২৭টি গুচ্ছগ্রামে অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে প্রায় ১৭ হাজার হতদরিদ্র মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ভাগ্যোন্নয়নের পথ খুঁজে বেড়ানো এসব মানুষকে দিশা দেখাচ্ছে মাছ চাষ।
রংপুর মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গুচ্ছগ্রামের ৪৯ দশমিক ৩৬ একর আয়তনের ৩৭টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন চার হাজার ৩৭৫ জন মানুষ। ২০১৮ সালে এসব পুকুরে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৭২ টন মাছ। পরিকল্পিত চাষে মাছের উৎপাদন দুইশ টনে উন্নীত করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাছ বিক্রির টাকায় কিছুটা হলেও গুচ্ছগ্রামবাসীর অভাব দূর হচ্ছে, দেখা দিয়েছে ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা। পাশাপাশি গুচ্ছগ্রামবাসীর মধ্যে হড়ে উঠছে ভ্রাতৃত্ববোধ, সঞ্চয়ী মনোভাব।
বড়বিল গুচ্ছগ্রাম মাছ চাষ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম রাজা বলেন, ২০১৮ সালে এ গ্রামের পুকুরের মাছ বিক্রি করে লাভ হয়েছিল প্রায় ছয় লাখ টাকা। লাভের অংশ সমিতির সদস্যদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
সমিতির অন্যতম সদস্য মো. বাবর আলী বলেন, জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা মাছ চাষে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া প্রতি বছরে পোনাও পাই। তবে পুকুরের আয়তন অনুযায়ী পোনা ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। মাছের খাবারেও সংকট তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় সহজ শর্তে ঋণ ও বিভিন্ন সহায়তা পেলে আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবো।
বদরগঞ্জের চৌরিপুকুর গুচ্ছগ্রাম মাছ চাষ সমিতির সভাপতি অহিদুল হক বলেন, জেলা মৎস্য অফিস থেকে পুকুরের পাড় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ার ভয় নেই। তবে মাছের খাবারের টাকা জোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে। এত কিছুর পরও নিজেরা মাছ খেতে পারছি, বিক্রি করতে পারছি। পরিবার নিয়ে অনেক ভালো আছি।
রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গুচ্ছগ্রামবাসীকে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রতি বছর মাছ চাষে বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হয়। বর্তমানে পুকুর খনন, পাড় বাঁধাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তারা নিয়মিত পুকুরগুলো পরিদর্শন করছেন। পুকুরগুলোয় সঠিক নিয়মে চাষ করা গেলে মাছের উৎপাদন তিন গুণ বাড়বে। বর্তমানে রংপুরে বছরে মাছের চাহিদা ৬৩ হাজার ৯৫ টন। আর উৎপাদন হচ্ছে ৫৪ হাজার ৮১৯ টন মাছ।