শিক্ষক হচ্ছেন সমাজ ও সভ্যতার অভিভাবক। একজন শিক্ষক সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। এলাকার আবাল বৃদ্ধবনিতা শিক্ষককে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করেন। পেশাগত দাষিত্ব পালনে একাগ্রতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার কারনে এই শ্রদ্ধা ও সম্মান। শিক্ষক বলতে একজন আলোকিত জ্ঞানী, বুদ্ধি দীপ্ত পন্ডিত ব্যক্তিকে বুঝায়। যিনি শিক্ষার্থীর জ্ঞান অন্বেষন ও আহরনে, মেধা বিকাশ ও উন্নয়নে, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে, মানসিক গুনাবলী বিকাশে এবং সমাজ বিবর্তনে ও সুশীল নাগরিক তৈরী প্রক্রিয়ায় সার্বিক ভাবে সহায়তা দান করেন। শিক্ষক মুল্যবোধে উজ্জীবিত সৎ ধার্মিক, সমাজ সচেতন ব্যক্তি। নবীন প্রজন্মের পথ প্রদর্শক ও দিশারী, নবীন প্রজন্মের নৈতিক মানের বিকাশ, সেবামুখী মানব কল্যানমুখী মনোভাব সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখেন। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ও ন্যায়নীতি, সু বিচার ও শান্তি শৃংখলাপূর্ন, জ্ঞান সমৃদ্ধ ও সৃজনশীল সমাজ গঠনে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।
শিক্ষক হচ্ছেন আদর্শ ব্যক্তিত্ত্ব। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকের আদর্শে অনুপ্রানিত ও উজ্জীবিত হয়। শিক্ষকের জীবন যাপন, চিন্তা চেতনা ও আদর্শ নবীন প্রজন্মকে পথ দেখায়। শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে জ্ঞান অর্জন। জ্ঞান শক্তি বড় শক্তি। প্রজন্মের ভবিষ্যত জীবন জীবিকার প্রয়োজনে যে যাই হওনা কেন সবার আগে মানুষ হওয়ার শিক্ষা অর্জন করা। শিক্ষক আগামী প্রজন্মের জীবনে বহুমাত্রিক বোধের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটায়ে আদর্শ মানুষরুপে গড়ে উঠার জন্য অনুপ্রেরনা জোগায়। জীবনের সাফল্য লাভের যুদ্ধে ও উন্নত জীবন গঠনে প্রতিনিয়ত উৎসাহ ও দিক নির্দেশনা দেন।
ভাল শিক্ষকের নীতি নির্দেশনা, চিন্তা চেতনা, জীবনবোধ ও দৃষ্টিভক্তির স্বচ্ছতা অনুসরন করে নতুন প্রজন্ম আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। নতুন প্রজন্মই আগামী দিনে নাগরিক। অফুরন্ত প্রানশক্তির প্রতিক নতুন প্রজন্ম অসততার ও অলসতার পথ পরিহার করে অন্যায়, অবিচার, জীর্নতা স্থবিরতার অবসান ঘটিয়ে আলোকিত প্রভাতের সুচনা করবে। নবীন বয়সই হলো দায়িত্ব বোধ অনুশীলন ও সামাজিক কর্তব্যবোধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। শিক্ষকগন নতুন প্রজন্মের দক্ষতা, বুদ্ধিবৃত্তিক মানসিক গুনাবলী অর্জনে সহায়তা করেন। শিক্ষকের দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, অভিজ্ঞতা ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে চরিত্রবান ধৈর্য্যশীল আলোকিত প্রজন্ম গড়ে উঠে। শিক্ষকগন প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ, উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে উদাসীনতা, অবহেলা ও অনাকাংখিত কর্মকান্ড রোধ করে দায়িত্বের প্রতি মনোযোগী করে সৎকর্মশীল গৌরবানিত মানুষ হওয়ার পথ দেখায়। নবীনদের মুল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে তাদের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। নবীন বয়সেই শৃংখলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলন, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। এই সময়ের সফলতাই জীবনের বাকী সময়ের সফলতা। কেননা নবীন বয়সেই শিক্ষাগ্রহণ ও কর্মক্ষেত্রের প্রস্তুতির সময়। শিক্ষকগন এই সময় উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সৎ, কর্মঠ পরিশ্রমী মানুষ হয়ে উঠা ও বুদ্ধি মত্তার বিকাশ ঘটিয়ে নবীন প্রজন্মকে সম্পদে পরিনত করেন। সৎ, নীতিবান শিক্ষক শ্রেনীকক্ষে মুল্যবোধ সৃষ্টি ও অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিবেকজাগ্রত ও পরিশুদ্ধ করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। কথা ও কাজে সততা, নিষ্ঠা ও ন্যয়নীতি অনুশীলনের জন্য প্রেষনা দিয়ে থাকেন। যাতে ভবিষ্যত কর্মজীবনে অন্যায় ও অপরাধ মূলক কার্যক্রম হতে বিরত থেকে সৎ নীতিবান ও দায়িত্বশীল সম্মানী মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। নিরলস পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনার মাধ্যমে ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্র তথা বাস্তব জীবনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আদর্শ পরিবার ও উন্নত সমাজ গঠনে ভুমিকা রাখতে পারে। অস্থির তারুন্যকে গঠন মুলক কাজে লাগিয়ে মেধার বিকাশ সৃজনশীল প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলে সমাজ, দেশ ও জাতীর কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার সুযোগ করে দেন। দেশ ও জাতীর সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যেই মানব জীবনের সাফল্য নিহিত। কেননা দেশ প্রেম মানব চরিত্রের মহত্তমগুন।
শিক্ষকের নীতি নির্দেশনা, চিন্তা চেতনা ও আদর্শ নবীন প্রজন্মের জীবন চলার পথে পাথেয়। শিক্ষকের চারিত্রিক মাধুর্য্য নৈতিক গুনাবলী, জ্ঞান বিতরনে ভাবনা, কর্মে সুফল ও সুখ্যাতি সমাজের সর্বস্তরে আলোকউজ্জল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। বর্তমান সমাজে শৃংখলার অভাব, নীতিবোধ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়, দলাদলি হানাহানি পরিহার করে সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দক্ষ ও গুনী শিক্ষকের প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে সততা, সত্যবাদিতা ও ত্যাগের আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ প্রদর্শক হিসাবে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিতা-মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান। পরিবারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্বশীলতা, মনুষত্ব বিকাশ, পরমত সহিষ্ণু আচরন উদুদ্ধ করা, হিংসা বিদ্বেষ, দলাদলী ও নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে থেকে সততা ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ও সুশিক্ষা অর্জনে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। নবীন প্রজন্ম সঠিক শিক্ষা ও পরিচর্য্যার মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখে। তারা সুশিক্ষা গ্রহন করে জাতিকে উজ্জীবিত ও বিকশিত করতে চায়। দেশ জাতি ও মানবতার কল্যাণে দীপ্ত শপথে এগতে চায়। গুনি মানুষের আলোকিত দিকগুলি তারা গ্রহন করবে। আলোকিত মানুষের মনের ঐশ^র্য ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থ বিত্ত অর্জনের লোভে তাড়িত না হয়ে অসহায় দুখী মানুষের কল্যানে আত্ম নিবেদনের শিক্ষা নবীন প্রজন্মের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভোগবাদী ব্যক্তি স্বার্থ জলাজ্জলি দিয়ে জনকল্যানে প্রগতিশীল চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। সততাই সর্বোত্তম নীতি- এই আদর্শ লালন করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে চলার অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে। পরিবারে পিতা মাতা ও বড়দের শ্রদ্ধা ভক্তি করা ছোটদের ¯েœহ মমতা দিয়ে নিস্কুলুষ জীবন গঠনের পথ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের সৃজনশীল প্রতিভা পরিবার ও সমাজের কাজে লাগিয়ে একটি শোষনমুক্ত বৈষম্যহীন, দূর্নীতিমুক্ত সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে।
লেখক বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু সামা মিঞ