এই তো সে দিন প্রিয় পরিবার, হাজারো সুখ দুঃখের স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় শহর, প্রিয় মানুষ সব কিছু রেখে এক অজানা জনপদের উদ্দেশ্যে নতুন নতুন কত স্বপ্ন, কত আশংকা, নিয়ে যোগ দিয়েছিলাম গাইবান্ধা জেলায়-জেলা পুলিশের অভিভাবক হয়ে। ও হ্যাঁ তারিখ টাও ঠিক মনে আছে ১৫ মার্চ ২০১৮
আদিবাসী(সাওতাল) ইস্যুতে ছড়ানো উত্তাপ তখনও দগ্ধ করে চলেছে গাইবান্ধার মানুষকে, প্রতিনিয়ত যন্ত্রনা দিয়ে চলেছে স্থানীয় প্রশাসনকে, ২০১৩-২০১৪ ও তৎপরবর্তী সময়ে জামায়াত-শিবির-বিএনপির ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ তুলশীঘাটের সেই খেটে খাওয়া মানুষের আর্তচিৎকার তখনও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে গাইবান্ধার আকাশে-বাতাসে।
চরাঞ্চলের ডাকাতি সন্ত্রাস মারামারির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে এ জনপদের প্রতিটি কোনায়। এরই ধারাবাহিকতায় মাদক, জুয়া, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতনের মত সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায় গাইবান্ধার মানুষ।
সবার কথা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা অস্থির পুলিশ মনে পুলিশের আবাস যখন ঘুনে ধরা, নড়বড়ে ঠিক তখনি মনে পড়লো বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের করুন ইতিহাস-সাঈদীকে চাঁদে দেখাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির গণপিটুনিতে নিহত আমার প্রাণ-প্রিয় ০৪(চার) পুলিশ সদস্যের কথা। নিরাপোরাধ এই পুলিশ সদস্যদের আর্তনাদ এখনো শিহরিত করে প্রতিটি পুলিশ সদস্যের দেহ-মন।
মানব সেবার প্রত্যয় ও বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে, শত প্রতিকুলতা, শত ঋনাত্মকতা পাড়ি দিয়ে পুলিশের ইমেজকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা, একই সাথে পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমার জন্য চ্যালেঞ্জই ছিল বৈ কি।
কৃষক বাবা ও গৃহিনী মায়ের সন্তান হয়ে বুয়েট, আইবিএ শেষ করা এমনকি একজন বুয়েটিয়ান হিসেবে বিসিএস পুলিশে যোগদান, স্ত্রী-সন্তান……………….কত চ্যালেঞ্জ যে জীবনে নিয়েছি…!! সবটাই ছিল নিজেকে নিয়ে নিজের পরিবারকে নিয়ে কিন্তু একটা বিশাল জনপদের মানুষদের নির্দিধায় পথচলা, তাদের জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তির ঘুম নিশ্চিত করা ছিল জীবনের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যা সত্যিই আমাকে শংকিত করেছিল।
জঙ্গিবাদের সাথে সাথে তৃষা হত্যা, আগুন সন্ত্রাস, পুলিশ হত্যা, ডাকাতি, খুন, জ্বিনের বাদশা, ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া ও সাওতাল বিদ্রোহের সাথে যে গাইবান্ধার ব্রান্ডিং সেখানে গাইবান্ধাবাসীর দোয়া ও সহযোগিতায় গত ১৮(আঠারো) মাসে কোন ডাকাতি সংঘটিত হয়নি, আগুন সন্তাস আগুন জ্বালতে সাহস পায়নি।
০৫ই জানুয়ারী নির্বাচনে যেখানে ৬০৫টি ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল র্দুবৃত্তরা সেখানে কোনরুপ সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গাইবান্ধাবাসীকে উপহার দিতে পেরেছি শুধু মাত্র আপনাদের সহযোগীতায়।
চেষ্টাকরেছিভালোবাসাদিয়েসকলবাঁধাবিপত্তিকেজয়করতে-আর তাই সাধ্যেরমধ্যেসবটুকুকরারচেষ্টকরেছি।
বৃদ্ধ অসহায়দের গৃহ নির্মাণ, তাদের ভরনপোষন, রাজপথের ড্রাইভারদের ক্লান্তি নিরসনে চা-পানের ব্যবস্থা ও সর্ব শেষ ভয়াবহ বন্যায় আর্তদের পাশে দাঁড়ানোকে তাই কর্তব্য মনে করেছি।
মাননীয়প্রধানমন্ত্রীতথাআইজিপিমহাদয়েরনির্দেশনাবাস্তবায়নেএকটিস্বচ্ছসুন্দরনিয়োগসম্পন্নকরেছি সবার দোয়া ও সহযোগীতায়।
এছাড়াও অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা ও পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ নিঃশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি শতভাগ; সর্বক্ষেত্রে শতভাগ সফলতা পেয়েছি কিনা জানিনা। তবে একেবারে ব্যর্থ হইনি একথা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বঙ্গবন্ধুরআদর্শকেবুকেধারনকরেমুক্তিযুদ্ধেরচেনায়উদ্বুদ্ধহয়েকাজকরেছিগাইবান্ধাবাসীরজন্যকাজ করতে গিয়ে আপনাদের সহযোগীতা পেয়েছি অফুরন্ত যা আমাকে চির কৃতজ্ঞ করে রাখবে আজীবন।
যাকরতেপেরেছিতারসফলতাআপনাদেরআরযাপারিনিতারদায়আজআমারসেজন্যগাইবান্ধারপ্রতিটিমানুষেরকাছে#আমি ক্ষমাপ্রার্থী। নতুন কর্মস্থলে যেন ভুলত্রুটি সুধরে মানব সেবায় নিজেকে সমর্পন করতে পারি সে দোয়া চেয়ে সকলের সুস্বাস্থ্য ও দির্ঘায়ু কামনা করছি। নতুন কর্মস্থল “জেলা পুলিশ, নওগাঁ” আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, ভবিষ্যতেও আপনাদের সেবা কিংবা আপ্যায়িত করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আবার দেখা হবে নিশ্চয় এই প্রত্যাশা রেখে বিদায় নিচ্ছি আমি প্রকৌশলী জনাব আবদুল মান্নান মিয়া, বিপিএম পুলিশ সুপার গাইবান্ধা।
ভালো থাকুক প্রিয় মানুষ, ভালো থাকুক প্রিয় গাইবান্ধা।